এডভেঞ্চার প্রেমীদের জন্য দুর্গম পাহাড়-পর্বতের বন্ধুর পথ পেরিয়ে গহীনের সৌন্দর্য আস্বাদনই চরম জয়ের অনুভূতি। অসংখ্য সৌন্দর্যের এক উপাখ্যান চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ড উপজেলা। সৌন্দর্যে মোড়ানো এই উপজেলায় প্রকৃতির সবকিছুই আছে। পাহাড়, পর্বত, ঝর্ণা, ট্রেইল, ইকো পার্ক কি নেই এখানে! সীতাকুণ্ডের গহীন পাহাড়ে কি পরিমাণ রহস্য আর সৌন্দর্য যে লুকিয়ে আছে তা সেখানে না গেলে বিশ্বাস হবে না। এখানে যত পাহাড়ি ট্রেইল আছে তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্গম, রহস্যময় এবং সুন্দর ট্রেইল হলো সোনাইছড়ি ট্রেইল।
এই ট্রেইলের সবচাইতে আকর্ষনীয় জিনিস হলো বিশাল আকৃতির পাথর! যেহুতু পাহাড়গুলো টারশিয়ার যুগের পাহাড়গুলোর সমগোত্রীয়, তাই এই ধরণের পাথর থাকা স্বাভাবিক! তবে সমস্যা হলো এই পাথরের উপর দিয়েই আপনাকে যেতে হবে! বিশাল বিশাল এই পিচ্ছিল পাথরগুলা অতিক্রম করা বহু কষ্টসাধ্য! পাথর অতিক্রম করতে করতে সামনে গেলে দেখা যাবে ২০০ ফিট উচ্চতার একটি পাহাড়! ২০০ ফুট তেমন উচু নয়! তবে এই ২০০ ফুট উচ্চতার পাহাড়টি ৭৫ ডিগ্রি angle এ খাড়া! যাহা অতিক্রম করতে গেলে আপনাকে প্রথমত জোঁকের খপ্পরে পড়তে হবে! এইখানে আপনি দেখবেন জোঁকের দল! পিপড়া যেভাবে দলবেধে চলে ঠিক তেমনি এখানে জোঁকগুলারে দলে দলে দেখবেন!
সোনাইছড়ি ট্রেইলটি সীতাকুণ্ডের মীরসরাই পাহাড় রেঞ্জের হাদি ফকিরহাট বাজার এলাকায় অবস্থিত। বন্য পাথুরে সোনাইছড়ি ট্রেইল বারৈয়াঢালা অভয়ারণ্যের আওতাভুক্ত। ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ট্রেইলটি মীরসরাইয়ের অন্যান্য ট্রেইলগুলো থেকে একদম আলাদা এবং সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। বর্ষায় এর ভয়াবহতা বেড়ে যায় অনেকগুন। বৈচিত্র্যময় এই ট্রেইল পুরো মাত্রায় বুনো এবং পাথুরে। সোনাইছড়ি ট্রেইলের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য এর পাথুরে পথ আর বোল্ডার। এই ট্রেইলে তিন্দুর বড় পাথরের মত প্রচুর বড় বড় পাথর দেখতে পাবেন। পাথুরে এই ট্রেইলে বড় বড় পাথরের ঢল আর পাহাড়ি সৌন্দর্য আসলেই মনোমুগ্ধকর। আপনাকে নিয়ে যাবে এক অজানা রাজ্যে। বর্ষায় পিচ্ছিল হয়ে যায় পাথরের বড় বড় বোল্ডারগুলো। পুরো পথটাই বড় বড় পাহাড়, গভীর গিরিখাত, উঁচু নিচু ছড়া আর গভীর কুমে ভরা এবং ট্রেইলের শেষ মাথায় মনোমুগ্ধকর সোনাইছড়ি ঝর্ণা পাবেন। সম্পূর্ণ পথটাই আপনাকে দেবে এক ভয় মিশ্রিত শিহরণ। বর্ষায় যাওয়া খুবই বিপজ্জনক। তাই আপনাকে যেতে হবে শুকনো মৌসুমে।
কখনো বড় বড় বোল্ডার আর দুই পাহাড়ের ফাঁক দিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া, আবার কখনো খাড়া কোনো পথ বেয়ে উপরে উঠা। কোথাও স্বল্প আলো আবার কোথাও সম্পূর্ণ উন্মুক্ত আকাশ। এ যেন ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলায়। এই ট্রেইলটি নানা রহস্যে আবৃত। এখানে রয়েছে বাদুইজ্জা কুম। কুম বা সুড়ঙ্গ যাই বলা হউক না কেন এটি একটি সংকীর্ণ অথচ বিস্তৃত গভীর কুম, যার দুপাশের পাথুরে দেয়াল খাড়া ১০০-১৫০ ফুট উঁচু। ভেতরে গহীন অন্ধকার। ভেতরে হাজার হাজার বাঁদুরের ডানা ঝাপটানো আর কিচ কিচ চিৎকারে কানে তালা লাগার অবস্থা হয়। যা সৃষ্টি করে রেখেছে এক ভয়াবহ ভুতুড়ে আবহ। এই রোমাঞ্চ আর ভয়াবহতা এক অমোঘ আকর্ষণে টেনে নিয়ে যায় এডভেঞ্চার প্রেমীদের সোনাইছড়ি ট্রেইলে।
যাবেন কিভাবে:
ঢাকার ফকিরাপুল, সায়দাবাদ, মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোন বাসে করে হাদি ফকিরহাট বাজারে নামতে হবে।। এস আলম, শ্যামলী, সৌদিয়া, ইউনিক, হানিফ, ঈগল, এনা, সোহাগ টি আর প্রভৃতি এসি ও নন-এসি বাস চট্টগ্রাম যায় প্রতিদিন। ভাড়া পড়বে ৪২০ থেকে ১১০০ টাকা। এছাড়া ট্রেনে চড়েও সীতাকুণ্ড নেমে হাদি ফকিরহাট আসা যায়। সেখান থেকে হাদি ফকিরহাট জামে মসজিদ এর গলি ধরে হেঁটে কিংবা সিএনজি নিয়ে বড় পাথর যেতে হবে। সেখান থেকেই ট্রেইলের শুরু। হাদি ফকিরহাট এর শেষে পাহাড়ের শুরু থেকে সোনাইছড়ি ট্রেইলের শেষ প্রান্তে পৌঁছাতে সময় লাগবে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা।